• Call: 0 (184) 933 3354
Open

ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়

ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় 

আপনার ওজন কি দিন দিন বেড়েই চলেছে ❓

অতিরিক্ত ওজন আমাদের কারোরই কাম্য নয়। আমার সকলেই সুষ্ঠ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে চাই। আর সে জন্য সবার আগে প্রয়োজন সঠিক ওজন বজায় রাখা। বর্তমানে সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে।এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশী প্রকাশ পায় দিন দিন দৈহিক ওজন বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে।

১. শরীরের হরমোনাল ফাংশন পরীক্ষা করা 

ওজন অনিয়ন্ত্রিত বেড়ে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মাঝে বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা অন্যতম। কারণ আমাদের শরীরের মেটাবলিজম অধিকাংশই নিয়ন্ত্রিত হয় বিভিন্ন হরমোনের মাধ্যমে। বিশেষ কতগুলো হরমোন সম্পর্কে আমরা জানবো যেগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হলে ওজন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। যেমন- থাইরয়েড হরমোন, ইনসুলিন হরমোন, কর্টিসল, এস্ট্রোজেন, প্রজেস্টোরন, টেস্টোস্টেরন, মেলাটোনিন হরমোন, লেপটিন ও গ্রেলিন হরমোন ইত্যাদি। 

➡️থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা কমে গেলে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায় তাই ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে, আবার এই হরমোনের কার্যকারীতা বেড়ে গেলে ওজন কমতে থাকে।

➡️রক্তে সঠিক পরিমাণে ইনসুলিন হরমোন না উৎপন্ন হলে বা ফাংশন করতে না পারলে অতিরিক্ত শর্করা চর্বি আকারে জমতে শুরু করে এবং ওজন বাড়ায়। 

➡️অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে কর্টিসল হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়, যার ফলে পেটের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমতে শুরু করে এবং ওজন বাড়ায়।

➡️প্রজনন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলেও শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে শুরু করে। 

➡️মেয়েদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন লেভেল বেড়ে গেলে ওজন বেড়ে যেতে দেখা যায়। 

➡️যাদের ঘুম পর্যাপ্ত হয় না, ঘুমের সঠিক সাইকেল ঠিক নেই তাদের ক্ষেত্রে ওজন ব্যাপক বেড়ে যেতে দেখা যায়। কারণ এতে মেলাটনিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। 

এধরনের হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা বিভিন্ন মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়- 

📋থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা নিরূপণে TSH, Free T4, Free T3 টেস্টগুলো করার প্রয়োজন হয়। 

📋ইনসুলিন রেসিস্টেন্স আছে কিনা বা ইনসুলিন হরমোন সঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা তা নিরূপণে HbA1c, Oral Glucose Tolerance Test (OGTT), RBS টেস্টগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হয়। 

📋স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ স্বাভাবিক আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য 24-hour Urine Cortisol টেস্ট করা হয়ে থাকে। 

📋মেয়েদের শরীরে পিসিওডি এবং প্রজনন হরমোনের ভারসাম্য জনিত সমস্যা নিরূপণে Total and Free Testosterone, LH/FSH Ratio (Luteinizing Hormone/Follicle-Stimulating Hormone), Fasting Insulin & Glucose ইত্যাদি এই টেস্টগুলো করানো হয়ে থাকে। 

📋পুরুষদের প্রজনন হরমোনের ভারসাম্য টেস্টের জন্য নিম্নোক্ত টেস্টগুলো করা হয়- Total Testosterone Test, Free Testosterone Test, Luteinizing Hormone (LH) Test, Follicle-Stimulating Hormone (FSH) Test, Prolactin Test, Estradiol (E2) Test, Sex Hormone-Binding Globulin (SHBG) Test ইত্যাদি। 

যদি টেস্টগুলো করানোর পর আপনি জানতে পারেন আপনার হরমোনাল বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তবে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং পাশাপাশি ডায়েট ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে। তবেই আপনার সমস্যাগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং ওজন কমানো সহজ হবে ইনশাআল্লাহ।

২. দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা: প্রস্তুতি, বিবেচ্য বিষয় ও সাধারণ ভুল ধারণা

ওজন কমানোর জন্য পরিকল্পিত খাবারের তালিকা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই দৈনন্দিন খাবার নির্বাচন করার সময় ইন্টারনেটে পাওয়া যেকোনো খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেন, যা স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই, ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন যেটা ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরের শক্তি ও সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। এখন আমরা খাদ্য তালিকা প্রস্তুতে কী বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত এবং সাধারণ ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো।

খাদ্য তালিকা তৈরি করার সময় বিবেচ্য বিষয়

১. স্বাস্থ্যগত অবস্থা: 

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা উচিত।

২. প্রতিদিনের ক্যালোরির চাহিদা: 

সবার ক্যালোরির চাহিদা এক নয়। দৈনন্দিন কার্যকলাপ ,শারীরিক গঠন, ওজন, উচ্চতা এবং বয়সের উপর ভিত্তি করে ক্যালোরির চাহিদা নির্ধারণ করা উচিত।

৩. খাবারের মান ও সহজলভ্যতা: 

পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য হওয়া উচিত, যা সহজেই বাজার থেকে কেনা যায় এবং নিজে/বাসায় প্রস্তুত করা সম্ভব।

খাদ্য তালিকা সম্পর্কে সাধারণ ভুল ধারণা

১. কম খাওয়া মানেই স্বাস্থ্যকর ডায়েট নয়: 

অনেকেই মনে করেন ওজন কমানোর জন্য কম খেতে হবে/কোনো বেলার বিশেষত রাতের খাবার বাদ দিতে হবে। কিন্তু কোনো বেলা খাবার বাদ দিলে ও সঠিক পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে।

২. কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে ওজন কমবে: 

একেবারে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে শরীরে শক্তির ঘাটতি হয়, যা নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বরং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

৩. সাধারণ খাদ্য তালিকা সবাই অনুসরণ করতে পারে: 

ইন্টারনেটে প্রচুর সাধারণ খাদ্য তালিকা পাওয়া যায়, যা অনেকেই অনুসরণ করেন। তবে, এগুলো ব্যক্তিগত চাহিদার কথা এগুলো ব্যক্তিগত চাহিদার কথা। তাই এটি অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর হতে পারে। নিজের শারীরিক ও মানসিক চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করাই উত্তম।

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া সাধারণ তালিকা অনুসরণ না করে, পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী নিজস্ব খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করাই উত্তম। এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ওজন কমানোর কিছু দারুণ টিপস

✅সকালের নাস্তায় পর্যাপ্ত প্রোটিন রাখুন:

সকালের নাস্তায় ডিম বা দুধ অবশ্যই রাখবেন তাহলে আপনার সারাদিনে অতিরিক্ত খাওয়ার ক্রেভিংস অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

✅ রাফেজ সমৃদ্ধ খাবার:

প্রতিদিনের খাবারে বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি, ওটস, বার্লি ইত্যাদি শস্য জাতীয় খাবার রাখা হলে অতিরিক্ত খাওয়ার ক্রেভিংস অনেকাংশেই কমে যায় এবং ওজন কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। 

✅স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট গ্রহন:

খাবারের তালিকায় পরিমাণমতো ওমেগা-৩ এবং ওমেগা -৬ যুক্ত খাবার রাখতে পারেন যা আপনার শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করবে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে।

✅চিনিযুক্ত খাবার পরিহার:

বিভিন্ন বেকারি পণ্য, ক্যান্ডি, আইসক্রিম ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে। যা আপনার খাবারের ক্রেভিংস কমিয়ে ক্যালোরি কন্ট্রোল রাখতে সাহায্য করবে।

✅খাবার মনোযোগ দিয়ে খাওয়া:

খাবার খাওয়ার সময় মোবাইল, টিভি দেখা বা অন্য কোনো কাজে যুক্ত না থেকে সম্পূর্ণ মনোযোগ খাবারে দিবেন। তাহলে আপনি যতটুকু খাচ্ছেন সেটিই পর্যাপ্ত মনে হবে এবং অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা প্রতিহত করবে।

✅নিজের খাবার নিজে তৈরি করুন:

গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিজের খাবার নিজে তৈরি করলে ক্যালোরি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং খাবার পরিমিত খেলেও তৃপ্তি চলে আসে। 

✅পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

পানি সকল পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে শোষন হওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পুরো মেটাবলিক ফাংশনের অনেকটাই পানি নিয়ন্ত্রণ করে।

✅পঞ্চেন্দ্রিয় ব্যবহার করে খাবেন :

খাবার গ্রহণের সময় খাবারের প্রতিটি বিষয় মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করে খাবেন, অনুভব করবেন তাতে আপনি পরিমিত খাবারে পর্যাপ্ত তৃপ্তি পাবেন। 

✅পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন:

চেষ্টা করবেন রাত ১০ টার পর সকল ডিভাইস দূরে রেখে ঘুমানোর। কোয়ালিটি সম্পন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে রাত ১০ টা থেকে ভোর ৩ টা পর্যন্ত ঘুম যথেষ্ট।  আপনার পুরো হরমোনাল ফাংশন সুন্দর কাজ করবে ইনশাআল্লাহ। 

✅মানসিক স্ট্রেস মুক্ত থাকুন:

আপনার ওজন নিয়ে খুব বেশি হতাশ বা দুশ্চিন্তা করবেন না। নিজের উপর ভরসা ও বিশ্বাস রাখুন। মানসিক ভাবে যতটা প্রাণবন্ত থাকবেন আপনার হরমোনাল ফাংশন ততো সুন্দরভাবে কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।

১০টি খাবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করে 

ওটস :

ওটমিল এ রয়েছে হেলদি কার্বোহাইড্রেট, জিঙ্ক, আইরন ও ফাইবার যা ওজন কমাতে কার্যকর। এছাড়া এতে রয়েছে বিটা গ্লুকান (Beta Glucan) যা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় এবং ওবেসিটি প্রতিরোধে কার্যকর।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (1).png

বিন্স / শিমের বিচি:

শিমের বিচি প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে পটাশিয়াম, আইরন ও ম্যাগনেসিয়াম। শিমের বিচি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং এটি ধীরে ধীরে হজম হয়। এটি আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে যা আপনাকে বেশি পরিমাণ খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (2).png

সবজির স্যুপ:

সবজির স্যুপ হতে পারে আপনার ওজন কমানোর জন্য চমৎকার একটি খাবার। এতে ভিটামিন সি, আইরন, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য মিনারেলস পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে। স্যুপ আপনার পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরা রাখে।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (3).png

শসা: 

শসাতে ক্যালোরি কম থাকে এবং এতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন কে এবং ফাইবার থাকে, যা ওজন হ্রাসে সহায়তা করে।

ডার্ক চকলেট:

ডার্ক চকলেটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড। ১২ জন মহিলার উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক চকলেট খাওয়ার ফলে ক্ষুধা কমে যায়। অর্থাৎ, আপনার বার বার খেতে ইচ্ছা করবে না যা ওজন কমাতে সহায়ক।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (4).png

টক দই: 

এটি ভিটামিন বি , ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। এছাড়া এতে রয়েছে প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (5).png

আপেল:

নিয়মিত খোসা সহ আপেল খাবেন। আপেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পানি, ফাইবার ও ভিটামিন সি। আপেলে ক্যালোরি কম থাকে। এতে পেকটিন রয়েছে, একটি ফাইবার যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আপেল আপনার ক্ষুধা কমায় এবং এর থেকে প্রাপ্ত ফাইবার আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করে।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (7).png

বাদাম:

বাদামে হেলদি ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে যা অক্সিডেশন বাড়াতে পারে এবং ফ্যাট বার্ন করে থাকে। এছাড়া এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই , ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। বিকালে আলমন্ড, কাজুবাদাম বা ওয়ালনাট হতে পারে একটি হেলদি স্ন্যাক্স।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (6).png

চিকেন, শসা , গাজর, লেটুস, টমেটো মিক্সড সালাদ: 

চিকেন / অথবা সেদ্ধ ডিম , শসা , গাজর, লেটুস, টমেটো দিয়ে তৈরী সালাদ আপনার ওজন কমাতে কার্যকর। সালাদে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন , ভিটামিন সি , আইরন এবং ফাইবার। এছাড়া চিকেন কিংবা ডিমে পাবেন পর্যাপ্ত প্রোটিন।

C:\Users\ASUS\Downloads\Fiber (8).png

ডিম:

ডিম প্রোটিন, ভিটামিন ডি , কোলিন ও ভিটামিন বি ১২ এর একটি ভালো উৎস। ডিম আপনার পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরা রাখে। যার ফলে আপনার ওজন সহজেই কমতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালের নাস্তায় ডিম খায় তাদের পেট সহজে ভরা থাকে এবং সারাদিন তারা কম ক্যালোরি গ্রহণ করে। আরেকটি গবেষণা অনুযায়ী, কিছু মানুষ যারা নাস্তায় খেয়েছিলো তারা তাদের BMI (Body Mass Index ) এবং ওজন সহজেই কমাতে পেরেছিলো।

সেদ্ধ আলু: 

অনেকেই মনে করে যে আলুতে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। তাই তারা তাদের খাবারের তালিকা থেকে আলুকে বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আলুতে কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও পর্যাপ্ত ভিটামিন, ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ পুরো আলু ভিটামিন, ফাইবার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি দিয়ে লোড করা হয়। এগুলিতে প্রতিরোধী স্টার্চ নামে একটি নির্দিষ্ট ধরণের স্টার্চ রয়েছে যা আপনার পেট ভরা রাখে। এই স্টার্চ আপনার ক্ষুধা কমায় এবং কম ক্যালোরি গ্রহণে সহায়তা করে। 

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া সাধারণ তালিকা অনুসরণ না করে, পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী নিজস্ব খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করাই উত্তম। এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ব্যায়াম ও লাইফস্টাইল: কোন কোন ব্যায়াম আপনার অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমাবে ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এবং সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০০ মিনিট শরীরচর্চা করা আবশ্যক। ব্যায়াম আমাদের ওজন কমানোর সাথে সাথে শরীরের মেটাবোলিজম বাড়ায়।

তাই আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে হলে আগে জেনে নিতে হবে কোন কোন ব্যায়াম আপনার অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমাবে………

✅ হাঁটা: 

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। এটি প্রায় ১৫০ ক্যালোরি পর্যন্ত বার্ন করতে পারে।প্রতিদিন সকাল-বিকেল নিয়ম করে হাঁটলে এতে দ্রুত ওজন কমবে।

✅ দড়ি লাফ: 

কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের অনেকের পক্ষেই নিয়মিত হাঁটার সময় বা সুযোগ হয় না। তাই তাদের জন্য দড়ি লাফ হতে পারে ওজন কমানোর সেরা উপায়। দড়ি লাফের মাধ্যমে খুব দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৈনিক১০ মিনিট হাঁটার চেয়ে ১০ মিনিট দড়ি লাফ দিলে তুলনামূলক বেশি ক্যালোরি বার্ন করা যায় এবং পেশিও শক্তিশালী হয়।

✅ ওয়েট লিফ্টিং: 

ওয়েট লিফ্টিং এর মাধ্যমেও অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়। ওয়েট লিফ্টিং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন এক ঘণ্টার জন্য সপ্তাহে ৩-৫ বার ওয়েট লিফ্টিং করুন এবং ২ দিন অন্তর ১দিন করে বিরতি নিতে হবে।

✅ সাঁতার:

ওজন কমানোর ব্যায়াম গুলোর মধ্যে সাতাঁর বা কার্ডিও ওয়ার্কআউট অন্যতম একটি মাধ্যম। সাঁতার কাটার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট গুলো আরও বেশী শক্তিশালী হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সপ্তাহে ৩-৪ দিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিটের জন্য সাঁতার কাটলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি খারাপ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়।

✅ পাইলেটস: 

বলিউডের বিভিন্ন তারকারা অনেকেই পাইলেটস করে তাদের ফিটনেস বজায় রাখেন। গবেষণায় বলা হয় যে, পাইলেটস আপনাকে শক্তিশালী এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

✅জগিং: 

হাঁটার পাশাপাশি জগিংও একটি বায়বীয় অনুশীলন।এটি আমাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত জগিং করলে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আমাদের বিপাকের হার বেড়ে যায়।

✅ ইয়োগা : 

ইয়োগা বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমেও শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব। গবেষণায় বলছে যে, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ক্ষুধা কমাতেও সাহায্য করে।

✅ সিঁড়ি আরোহণ: 

ওজন কমাতে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।অনেকের ঘরেই শরীরচর্চার সরঞ্জাম থাকে না। ফলে ব্যায়াম করতে পারেন না। তারা সিঁড়িতে ওঠানামা করার মাধ্যমেও ওজন কমাতে পারবেন। তাছাড়া সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে,জয়েন্ট, পেশি ও হাড়কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

কেন নিজে নিজে ওজন কমাতে যাবেন না ? 

নিজে নিজে ওজন কমাতে গিয়ে বেশ কিছু ভুল হতে পারে যা পরবর্তীতে শরীরে নানান সমস্যা তৈরি করে – 

❌ভুল ক্যালোরি সেটআপ : 

অনেকেই আছেন হঠাৎ ওজন কমানো শুরু করতেই বেশ কিছু খাবার প্রতিদিনকার খাবার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। যার ফলে কোনো বেলায় যতটুকু ক্যালোরি রাখা প্রয়োজন তার তুলনায় কম ক্যালোরি রাখা হয়ে থাকে। যার ফলে শরীর দূর্বল লাগে, মাথা ঘুরায় ইত্যাদি। 

❌পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট: 

নিজে নিজে ওজন কমাতে গিয়ে অপরিকল্পিত ডায়েট ফলো করার কারণ পুষ্টিগত ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার ফলে দিন দিন বিভিন্ন পুষ্টিগত ঘাটতি তার শরীরে বাসা বাঁধে। 

❌বিভিন্ন পুষ্টিগত ঘাটতির ফলাফল – 

অপরিকল্পিত ডায়েটের ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান খাবার থেকে বাদ পড়ে যায়। যার ফলে রক্তশূণ্যতা, ভিটামিন ডি এর অভাব সহ আরও নানান পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেয়। 

❌অতিরিক্ত এক্সারসাইজ / ব্যায়াম : 

ওজন কমানোর জার্নিটা হতে হবে একটি সুন্দর পরিকল্পনা অনুযায়ী। হঠাৎ করেই কঠিন এক্সারসাইজ করলে শরীর সেটা নিতে পারে না ফলস্বরূপ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

❌ইন্টারনেট ঘেঁটে ভুল ডায়েট ফলো করা – 

প্রতিটি মানুষের জন্য ডায়েট চার্ট আলাদা হয়ে থাকে। বলতে পারেন এটি একটি মেডিকেল চিকিৎসা যা অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। ভুল ডায়েট শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে যেমন- চুল পড়া, ফ্যাকাশে ভাব, অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা, দূর্বল লাগা ইত্যাদি। 

❌মানসিক ও সামাজিক প্রভাব – 

হঠাৎ করে নিজে নিজে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই সকল সামাজিক অনুষ্ঠান বা প্রোগ্রাম এড়িয়ে চলেন এবং নিজের সকল পছন্দের খাবার লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেন। যার ফলে ঐ ব্যাক্তির মাঝে মানসিক বিষন্নতা, খিটখিটে মেজাজ, হতাশা ইত্যাদি নানান সমস্যা দেখা দেয়। 

এখন আসুন তাহলে পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কেন ওজন কমাবেন? 

  • একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আপনার শরীরের সকল সমস্যা শুনে ও বুঝে সঠিক বিশ্লেষণ করে ডায়েট চার্ট তৈরি করবেন।
  • উক্ত ডায়েট চার্টে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে নিশ্চিত করা থাকবে। 
  • আপনার পছন্দের খাবারও ডায়েট ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারবেন। 
  • সঠিক এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম তিনিই আপনাকে দেখিয়ে দিবেন তাই শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।
  • সারাদিন বিভিন্ন পুষ্টিসম্মত খাবার কিভাবে খেয়ে ওজন কমাবেন তার সবটাই আপনার পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আপনাকে নির্দেশনা দিবেন। 
  • পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওজন কমালে আপনার চুল পড়া সমস্যা, ফ্যাকাশে চেহারা ইত্যাদি থাকবে না। বরং আপনি থাকবেন হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত এবং কোনো কাজে দূর্বল লাগবে না ইনশাআল্লাহ। 
  • তাই নিজে নিজে ওজন কমাতে যাবেন না, বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের সুপারভিশনে থেকে সঠিকভাবে ওজন কমাবেন, সুস্থ থাকবেন।

আপনাদের ওজন কমানোর যাত্রা সহজ ও সুন্দর করতে আমরা (SPED – Smart Parenting & Easy Diet বাংলাদেশের প্রথম বিশেষায়িত পুষ্টি কেন্দ্র) কাজ করছি। দেশের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ানদের তত্ত্বাবধানে ৫-২০ কেজি ওজন ১.৫-১০ মাসে কমানোর প্যাকেজ দিচ্ছি। সাথে পাচ্ছেন : একাধিক ডায়েট চার্ট, ১ টি ডায়েট প্ল্যান বুক, ১ টি মোটিভেশনাল বুক, অনলাইন গ্রূপ এক্সারসাইজ / ফিটনেস সেশন, ১ টি অনলাইন নিউট্রিশন ওয়ার্কশপ এবং আমাদের ফেইসবুক Weight Loss গ্রূপে প্রবেশাধিকার।

সিরিয়ালের জন্য কল করুন :০১৮৪৯৩৩৩৩৫৪, ০১৮১৬৩৯১৬০৭

ঠিকানা: বাড়ি ৭ এ, রোড ৪১, গুলশান ২

Leave a Reply

Your email address will not be published.

You may use these <abbr title="HyperText Markup Language">HTML</abbr> tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*